ফুল থেকে ফল হয় না কিন্তু ফুলের কেশর বিক্রি হয় চড়া দামে ।
দাম শুনলেই অনেকের মনে হবে এটা শুধু চড়া দাম নয় এটি অত্যন্ত দামী একটি কেশর । অনেক দাম হওয়া সত্বেও রান্নায় মসলা হিসেবে কিংবা রূপচর্চায় এর কদর কমেনি একটুও। আপনারা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি ।
হ্যাঁ বন্ধুরা আমি ফুলের কেশর জাফরানের কথাই বলছি। জাফরান বেশিরভাগ সময় বিরিয়ানি মসলার কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এটি বিভিন্ন নামিদামি প্রসাধনীর তৈরিতে ব্যবহার হয় তবে ঘরোয়াভাবে এর ব্যবহার কম থাকলেও এর ব্যাপক উপকারিতা আধুনিক নারীরা রূপচর্চায়এর ব্যবহার শুরু করেছে।
অনেক দামে হওয়ার পরও এর অনন্য গুণের কারণে এটি রূপচর্চায় নিজের স্থান করে নিয়েছে।
তবে যারা এখনো নিজেদের রূপচর্চার জন্য জাফরান কে ব্যবহার করেননি আমি আপনাদেরকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই উপকারিতা গুলো জানার পর আপনারাও জাফরানের ব্যবহার শুরু করে দিবেন
আজ আমরা জানবো রূপচর্চায় জাফরানের উপকারিতা গুলি কি কি।
রূপচর্চায় জাফরানের উপকারিতাঃ
ত্বকের রং ফর্সা করেঃ
জাফরান ত্বকের রং কে ফর্সা করার জন্য অনেক কার্যকর একটি উপাদান। তাই এটি অনেক দামী একটি রূপচর্চার উপাদান হওয়ার পর এর উপকারিতার কারণে এটি বিভিন্ন নামিদামি ফর্সাকারী ক্রিম তৈরিতে ব্যবহার হয় এবং অনেকে রূপচর্চায় এর ব্যবহার করে থাকে ।
জাফরান ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করলেও ত্বকের রং ফর্সা হয় । আবার প্রতিদিন এক গ্লাস যদি জাফরানের দুধ খাওয়া যায় তাহলেও এটি শরীরেকে ভেতর থেকে ফর্সা করে তুলতে সাহায্য করবে।
জাফরান ত্বকে ব্যবহার কিংবা দুধের সাথে মিশিয়ে পান করা যার । যেভাবে জাফরান ব্যবহার করলে আপনাদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা এবং সহজ হয় ত্বকের রং ফর্সা করার জন্য সেইভাবেই আপনারা জাফরান কে ব্যবহার করুন।
ত্বককে কোমল করেঃ
ত্বক ফর্সা করার সাথে সাথেই এটি ত্বকে অনেক বেশি কোমল রাখে তাই যারা নিজেদের ত্বককে কোমল এবং মোলায়েম রাখতে চান তারা জাফরান কি ত্বকের মধ্যে ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের কালো দাগ দূর করেঃ
আমাদের ত্বকে ব্রণ হওয়ার ফলে , ত্বকে রোদে পুড়ে যাওয়ার কারণে , মেছতার ফলে এবং নানা কারণে দাগ হয়। যে কারণেই দাগ হোক না কেন মুখের মধ্যে এ দাগগুলো কারোরই কাম্য নয় । আমরা সবাই চাই আমাদের ত্বকের কালো দাগ গুলোকে দূর করতে ।
ত্বকের ত্বকের এই সমস্ত কালো দাগ দূর করার জন্য জাফরান অত্যন্ত কার্যকর । ত্বকের দাগ দূর করার জন্য জাফরানের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন ।
ত্বকের দাগ দূর করতে যেভাবে জাফরানের ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন।
প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
হাফ কাপ কাঁচা তরল দুধ
১ চিমটি জাফরান
২ চামচ ময়দা
তৈরি ও ব্যবহারঃ
সবার প্রথমে হাফ কাপ কাঁচা দুধের মধ্যে এক চিমটে জাফরান দিয়ে এটিকে 15 থেকে 20 মিনিট পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হবে । এটি ভিজিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে দুধের সাথে যেন জাফরানের রং ভালো করে মিশে যায়।
20 মিনিট পর এর সাথে 2 চামচ ময়দা দিয়ে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নেন । ততক্ষণ পর্যন্ত এটি মিশাতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি মিশে নরম স্মুথ পেস্ট তৈরি হয়ে যায়।
সব উপাদান মিশিয়ে পেস্ট তৈরি হয়ে যাবার পর ব্রাশের সাহায্যে বাঁ হাতের সাহায্যে এটি ত্বকের মধ্যে এপ্লাই করে নিন।
এটি এপ্লাই করার পর ত্বকের মধ্যে শুকিয়ে আসা পর্যন্ত রেখে দিন ।
যখন এটি পুরোপুরি ত্বকের মধ্যে শুকিয়ে যাবে তখন পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন ।
নোটঃ
১। আপনারা যদি হাতের সাহায্যে এই প্যাকটি এপ্লাই করেন তাহলে এপ্লাই করার আগে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন যাতে হাতের মধ্যে কোন ধরনের ময়লা না থাকে।
২। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা এই প্যাকটি ব্যবহার করার পর আপনাদের ব্যবহারের মশ্চারাইজার ক্রীম লাগিয়ে নিবেন ।
ত্বকে টোনার হিসেবে কাজ করেঃ
আমাদের তখতে মৃতকোষ তুলে ফেলার জন্য এবং ধুলো-ময়লা তুলে ফেলার জন্য কাজের দিনের শেষে আমাদের উচিত ত্বকে টোনার ব্যবহার করা ত্বকে টোনার ব্যবহার করলে ত্বক হতে ধুলো-ময়লা এবং মৃত কোষ উঠে গিয়ে ত্বক সুন্দর আর ফ্রেশ থাকে ।
আপনারা চাইলেই জাফরান দিয়ে টোনার বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারবেন।
জাফরান দিয়ে টোনার যেভাবে ব্যবহার তৈরি করবেনঃ
প্রয়োজনীয় উপাদানঃ
চার চামচ গোলাপ জল
এক চিমটি জাফরান
তৈরির উপায়ঃ
জাফরানের টোনার ব্যবহার করার তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি বাসের মধ্যে চার চামচ গোলাপজল নিবেন।
এরপর এর মধ্যে জাফরান দিয়ে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
গোলাপ জলের মধ্যে জাফরানের রং পুরোপুরি ভাবে মিশে গেলে তৈরি হয়ে যাবে জাফরানের টোনার ।
এরপর একটি কটন প্যাড নিয়ে এর মধ্যে ডুবিয়ে নিন ডুবিয়ে একটু করে চেপে অতিরিক্ত ঠেলে ফেলে দিন এরপর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে চেপে এটা নিয়ে মুখটাকে ভালো করে মুছে নিন। এভাবে 2 থেকে 3 বার রিপিট করবেন।
নোটঃ
১। আপনারা যদি নিয়মিত এভাবে টোনার ব্যবহার করেন তাহলে আপনাদের ত্বকের দাগ গুলো দূর হয়ে যাবে এবং তার সাথে সাথে ত্বক ফর্সা হতে থাকবেন।
২। প্রতিদিন টোনার তৈরি করে প্রতিদিন ব্যাবহার করা যদি আপনাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায় এবং সময়সাপেক্ষ হয় তাহলে আপনারা এটি একবার তৈরি করে সাতদিন পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনারা উপাদানের অনুপাত ঠিক রেখে উপাদানগুলো বাড়িয়ে নেবেন ।
ত্বকের রুক্ষতা দূর করবেঃ
যাঁদের ত্বক রুক্ষ শুষ্ক এবং অল্পতে ত্বক ফেটে যায় তাদের জন্য জাফরান অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান হবে কারণ জাফরান ত্বকের রুক্ষ শুষ্কতা দূর করে দিয়ে ত্বকে মোলায়েম এবং মসৃণ রাখে ।
যাঁদের ত্বক রুক্ষ শুষ্ক তারা চাইলেই জাপানকে ত্বকের মধ্যে ব্যবহার করে শুষ্কতা দূর করতে পারবেন
ত্বকের রুক্ষতা দূর করার জন্য জাপানকে যেভাবে ব্যবহার করবেন।
উপাদানঃ
এক চামচ মধু
এক চিমটি জাফরান
ব্যবহারের উপায়ঃ
1 চা চামচ মধুর সাথে এক চিমটে জাফরান দিয়ে এটাকে হাতের বুড়ো আংগুল দিয়ে খুব ভালোভাবে ঘষে নিবেন এটা আপনার হাতের তালুতে ঘষে নিতে পারেন অথবা যেকোনো বাটিতে নিয়েও ঘষে নিতে পারেন।
এইভাবে ঘোষের নেবার পর এটিকে ত্বকের ওপর লাগিয়ে 5 মিনিট ম্যাসাজ করুন।
5 মিনিট ম্যাসাজ করার পর এটিকে ত্বকের মধ্যে আরও পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
এটি ত্বকের মধ্যে 5 মিনিট রেখে দেবার পর পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর করবেঃ
কাজের চাপ, দুশ্চিন্তা , রোদের প্রভাব এবং ধুলো-ময়লা আমাদের ত্বকে আটকে গিয়ে আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ সৃষ্টি করে । আমরা চাইলে একটু যত্ন নিয়ে অসময়ে ত্বকের মধ্যে সৃষ্ট বয়সের ছাপ দূর করতে পারি।
জাফরান এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যার সাহায্যে ত্বকের যত্ন নিয়ে আমরা বয়সের ছাপ দূর করতে পারব কারন জাফরানের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো ত্বক হতে বয়সের ছাপ কে দূর করে দেবার জন্য অনেক ভালো কাজ করে ।
ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর করতে জাফরানকে যেভাবে ব্যবহার করবেন
উপাদানঃ
তিন চামচ কাঁচা তরল দুধ
1 চিমটি জাফরান
ব্যবহারের নিয়মঃ
একটি ছোট কাচের কৌটায় কাঁচা তরল দুধ নিবেন এবং এর মধ্যে জাফরান দিয়ে এটাকে আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন।
এটি ভিজিয়ে রাখার পর এটিকে ত্বকের ওপর লাগিয়ে 5 মিনিট মতো মাসাজ করবেন ।
এটি ত্বকের মধ্যে 5 মিনিট ম্যাসাজ করার পর আরও 10 মিনিটের জন্য রেখে দিবেন।
এরপরে ত্বক পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিবেন ।
এই পদ্ধতিতে যদি আপনারা জাফরান কে এক সপ্তাহ মতো ব্যবহার করেন তাহলে ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর হয়ে যাবে । কারণ ত্বকের মধ্যে যে সকল টিস্যুর কারণে বয়সের ছাপ সৃষ্টি হয় জাফরান সে সকল টিস্যুকে মেরামত করে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে ।
ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করেঃ
আমাদের ত্বকে জাফরান অনেক ভালো ময়েশ্চারাইজের কাজ করে । যাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং প্রয়োজন হয় তারা জাফরানের ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে নরম কোমল এবং মোলায়েম করে তোলে।