ভিটামিন-সি যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।এটি একটি জৈব অম্ল, যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়।ভিটামিন সি’র রাসায়নিক সংকেত C6H8O6। এটি সাদা দানাদার পদার্থ।ভিটামিন সি মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ‘
ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ ও ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মত কিছু জারিত যৌগ বিদ্যমান থাকে।
এটি বিভিন্ন কোলাজেন সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেগুলোর অভাবে স্কার্ভি রোগের উপসর্গসমূহ দেখা দেয়।অ্যাসকরবেট জারণজনিত পীড়ন রোধে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
আমরা সবসময়ই শুনে থাকি ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। তবে প্রায় অনেকেই জানেন না এটির ঠিক কি কি উপকারিতা ।
এখন পৃথিবী জুড়ে যে করোনা ভাইরাসের মহামারী চলছে, তার থেকে বাঁচতে হয়তো অনেকেই ভিটামিন সি -এর সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছেন। তবে এর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। তাই আমাদের এই প্রতিবেদনে ভিটামিন সি- এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
ভিটামিন সি- এর অভাব বলতে কি বোঝায় ?
যখন শরীরে ভিটামিন সি – এর ঘাটতি হয়, তখনই ভিটামিন সি এর অভাব দেখা যায়।
ভিটামিন সি- এর অভাবের কারণ?
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার সঠিক পরিমানে না খেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শরীরে ভিটামিন সি- এর অভাবের লক্ষণ
মাড়ি ফুলে যাওয়া বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
শরীরে কোনো ক্ষত হলে তা সারতে দেরি হওয়া
চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া
শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক
নাক ফুলে যাওয়া বা নাক থেকে রক্ত পড়া
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
গাঁটে গাঁটে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া
ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি ?
কমলা লেবু, পাতি লেবু, টমেটো, সবুজ শাক সবজি, বাধা কপি ইত্যাদিতে। এছাড়াও প্রতিদিন যে পরিমাণ সবুজ শাক সবজি, লেবু খাওয়া হয় তা থেকেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়।এছাড়া আমলকী,কামরাঙ্গা,পেয়ারা থেকেও প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।কাঁচা মরিচ,পেয়ারা,বেল,মরিচ,টাটকা ভেষজ ,গাঢ় সবুজপাতা এবং শাক,ব্রকোলি,পেঁপে, কমলা, স্ট্রবেরী।
ভিটামিন সি ট্যাবলেট এর নাম
বিবরণ
হলুদ ট্যাবলেট হালকা সাদা
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া একদমই এই ওষুধ গুলো খাবেন না তাতে আপনার ক্ষতি ছাড়া ভালো কোনোদিন হবে না।
আইবুপুফেন ট্যাবলেট
আম্পিসিলিন সোডিয়াম ইনজেকশন
ক্লিন্ড্যামাইকিন ইনজেকশন
Chloroquine ফসফেট ট্যাবলেট
Polygeline ইনজেকশন
ম্যানিনটল ইনজেকশন
ভিটামিন সি যুক্ত সবজি
পুই শাক,মুলা শাক,সিম,বেগুন,পটল,ঢেরস,পেপে,লেবু, ঝিঙ্গা, করল্লা,কাচ্কলাসহ শীতকালীন বিভিন্ন রকম শাক সবজিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি এর কিছু উপকারিতা
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে
বর্তমানে অনেকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।ভিটামিন সি এর দৈনিক গ্রহণে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বলা হয়ে থাকে যে ভিটামিন সি মূত্রবর্ধক এজেন্টের মতো কাজ করতে পারে। এটি কিডনির রক্তনালীগুলি থেকে বেশি পরিমাণে সোডিয়াম এবং জল অপসারণে সহায়তা করে।
হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে
আমেরিকার এক গবেষণায় বলা হয়, ভিটামিন সি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। একাধিক সমীক্ষা প্রমাণ করেছে যে ভিটামিন সি এর উচ্চ প্লাসমার পরিমান হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোতে সহায়তা করে।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ নিরামিষ ডায়েট রক্তের কোলেস্টেরলকে ১% হ্রাস করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২% কমাতে সাহায্য করে থাকে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে শরীরে নানা ধরণের সংক্রমণ দেখা দেয় । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রক্ষা করার পাশাপাশি, ভিটামিন সি বিভিন্ন অ্যালার্জির তীব্রতাও হ্রাস করতে পারে । এছাড়াও সর্দি কাশি হলে এটি কমাতেও ভিটামিন সি উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি প্রস্টেট, লিভার, কোলনে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।
অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা করতে
আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে ভিটামিন সি আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। ভিটামিন সি এর সঠিক ডোজ প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং অস্টিওআর্থারাইটিসের ক্ষেত্রে জয়েন্টগুলি ঠিক রাখে।
চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে
ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে ছানি ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। আসলে, ভিটামিন সি এর উচ্চ মাত্রায় গ্রহণের ক্ষেত্রে ছানি হওয়ার ঝুঁকি ২০% কমে যায় । এটি চোখের মণির টিস্যুগুলিকে যেকোনো ধরণের ক্ষতির থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ভিটামিন সি চোখের ভিটামিন ই তৈরিতে সহায়তা করে যা চোখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
স্মৃতিশক্তি হ্রাস
ভিটামিন সি একটি খুব ভাল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কম বলে পরিচিত। ভিটামিন সি অ্যামাইলয়েড ফলকগুলিকে দ্রবীভূত করে, যা আমাদের মস্তিষ্কে ডিমেনশিয়া সৃষ্টিকারী বিষাক্ত প্রোটিন।
দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে
শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সির উপস্থিতির ফলে, মাড়ি সুস্থ থাকে এবং রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দূর হয় । যাকে আমরা পাইরিয়া বলে জানি ।
অভাবজনিত সমস্যা ও রোগ
ভিটামিন হলো খাদ্যে জরুরি কিছু ছোট জৈব অণু। ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। যেমন : বি২, ফলিক এসিড, বি১২, ভিটামিন সি ইত্যাদি) এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ( ভিটামিন ডি, এ, ই কে)। ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। অবসন্নতা, ছোট শ্বাস, ক্লান্ত ত্বক, মাথা ঘোরা, অনিয়ন্ত্রিত হার্টবিট- এগুলো
ভিটামিনের অভাবের লক্ষণ। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে ভিটামিনের অভাবে পাঁচ ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যার কথা।
১. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর অভাব রয়েছে,তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শরীরে শক্তি কমে যায়, অবসন্ন করেন।
২. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হয়, তাদের হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।
৩. ভিটামিন-সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এর ঘাটতি দেখা দিলে দাঁতে এবং মাড়িতে সমস্যা হতে পারে।
৪. ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া ভিটামিন-সি-এর ঘাটতির লক্ষণ।
৫. ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরে গেলে কী কী হতে পারে?
আপনি ফ্যাট কমানোর জন্য বা সর্দি-কাশি তাড়াতে যদি বেশি করে ভিটামিন সি খান, তবে শরীরের অপ্রয়োজনীয় ভিটামিন সি শরীর থেকে মল-মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।দিনে ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ভিটামিন সি-তে অক্সালেটস রয়েছে। তা থেকে কিডনি স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তর
- কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি থাকে ?
লেবু জাতীয় ফলে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন সি থাকে। - কি করে আরও বেশি ভিটামিন সি শরীরে প্রবেশ করানো যায় ?
বেশি ভিটামিনের জন্য ভিটামিন সি -এর সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। - ভিটামিন সি কি প্রতিদিন খাওয়া যায় ?
হ্যাঁ, ভিটামিন সি প্রতিদিন খাওয়া যায়। - ভিটামিন সি ও জিঙ্ক একসাথে খাওয়া যায় ?
হ্যাঁ, ভিটামিন সি ও জিঙ্ক একসাথে খাওয়া যায়। - লেবু বেশি সেদ্ধ করলে কি তার ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায় ?
হ্যাঁ, লেবু বেশি সেদ্ধ করলে তার ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। - ভিটামিন সি খাওয়ার সঠিক সময় কি ?
ভিটামিন সি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।যখন ইচ্ছে খাওয়া যেতে পারে।